আধুনিকায়নের যূগে হেটে হজ আদায়

হজ ইসলামের মোলিক ইবাদত গুলোর একটি এবং এটি ইসলামের মূল স্তম্ভসমূহের একটি। তবে ইসলামের ইবাদত গুলোর কিছু পর্যায় রয়েছে। যে পর্যায় পূর্ণ না হলে ইসলাম সে সকল ইবাদত একজন ইমানদারের জন্য বাধ্যতামূলক করেনা বরং সে ইবাদত পালনে নিষেধ করেন। তেমনই একটি হলো হজ। হজ শারীরিক এবং অর্থিক সচ্ছলতার ফলে বান্দার উপর ফরজ হয়। যদি কারো শারীরিক সামর্থ্য থাকে আর আর্থিক সামর্থ্য না থাকে অথবা আর্থিক সামর্থ্য আছে কিন্তু শারীরিক সামর্থ্য নেই কিংবা শারীরিক এবং আর্থিক সামর্থ্য আছে কিন্তু যাতায়াতের পথ অনিরাপদ এমতাবস্থায় সে ব্যক্তির উপর হজ ফরয নয় বরং ক্ষেত্র বিশেষে ওয়াজিব হয়। কিন্তু আর্থিক সচ্ছলতা না থাকলে তার উপর হজ ফরজ নয় যদিও সে হেটে উপস্থিত হতে পারে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,فِیۡهِ اٰیٰتٌۢ بَیِّنٰتٌ مَّقَامُ اِبۡرٰهِیۡمَ ومَنۡ دَخَلَهٗ کَانَ اٰمِنًا ولِلّٰهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الۡبَیۡتِ مَنِ اسۡتَطَاعَ اِلَیۡهِ سَبِیۡلًا وَ مَنۡ کَفَرَ فَاِنَّ اللّٰهَ غَنِیٌّ عَنِ الۡعٰلَمِیۡنَ ওতে বহু সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে, (যেমন) মাক্বামে ইব্রাহীম। যে কেউ সেখানে প্রবেশ করে, সে নিরাপত্তা লাভ করে। মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হজ করা তার অবশ্য কর্তব্য। আর যে অস্বীকার করবে (সে জেনে রাখুক যে), আল্লাহ জগতের প্রতি অমুখাপেক্ষী। [ আলে ইমরান-৯৭]
ইবনে কাসীর বলেন, ‘যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে’ অর্থাৎ, সম্পূর্ণ রাহা-খরচ পূরণ হওয়ার মত যথেষ্ট পাথেয় যার কাছে আছে। অনুরূপ রাস্তার ও জান-মালের নিরাপত্তা এবং শারীরিক সুস্থতা ইত্যাদিও সামর্থ্যের অন্তর্ভুক্ত। মহিলার জন্য মাহরাম (স্বামী অথবা যার সঙ্গে তার বিবাহ চিরতরে হারাম এমন কোন লোক) থাকাও জরুরী। (ফাতহুল ক্বাদীর) এই আয়াত প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর হজ ফরয হওয়ার দলীল। হাদীস দ্বারা এ কথাও পরিষ্কার হয়ে যায় যে, হজ জীবনে একবারই ফরয।
হজ ফরয হওার জন্য শারীরিক সুস্থতা, অর্থনৈতিক সচ্ছলতা, নিরাপদ যাত্রাপথ, এবং হজ থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত পারিবারিক খরচের আঞ্জাম দেয়ার সামর্থ্য থাকলে তিনি হজ করতে পারবেন। মুফতি হাফিজুদ্দীন ও মুফতি আব্দুল মাজিদের মতে, হজ সামর্থবান ধনী ব্যক্তিদের উপরই ফরজ হয়ে থাকে। যাতায়াত খরচ যার কাছে থাকবে তার উপর হজ ফরজ। যে ব্যক্তির যাতায়াত খরচ নাই, তার জন্য হজ ফরজ নয়। সুতরাং বর্তমান সময়ে পায়ে হেঁটে কারো হজে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই বা কেউ পায়ে হেঁটে মক্কা যেতে পারলেই তার ওপর হজ ফরজ হবে না। কেননা বিশ্বব্যাপী এখন অনেক প্রশাসনিক নিয়মকানুন রয়েছে যা পূর্বের যুগে ছিল না। যেহেতু গমনকারী হেটে যাচ্ছেন এখানে তার দীর্ঘ সময় হেটে যেতে যথেষ্ট শক্তির ব্যয় হবে। সেই শক্তি ব্যয় করতে তাকে পর্যাপ্ত আহার করতে হবে এবং দীর্ঘ এক বছরের আহারের খরচও নিতান্ত কম নয়। তাকে ভারত, পাকিস্তান, ইরাক, ইরান ও ইয়েমেনের রাষ্ট্রীয় ভিসা সংগ্রহ করতে হবে যার খরচও কম নয়। যেহেতু এতো সব খরচ করার সামার্থ্য তার আছে সেহেতু অধুনিক সময়ে তাকে পায়ে হেটে নিজেকে কষ্ট দিয়ে, সময় অপচয় করে দীর্ঘ সময় দুনিয়াবী সকল কিছু ছেড়ে হজে গমন করা ইসলাম কখনো সমর্থন করেনা। এটা আবেগের তাড়নায় হতে পারে। তবে আবেগের মাধ্যমে শরীয়তের কোনো বিধান প্রণয়ন করা যায়না। আমরা সমসাময়িক যাদেরকে পায়ে হেটে হজ আদায়ে রওয়ানা হতে দেখছি তিনাদের হয়তো শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্য থাকার ফলে তিনারা পায়ে হেটে হজে রওনা হয়েছেন। এক্ষেত্রে কিছু পয়েন্ট নিয়েই মূলত আমার আলোচনা।

১। নিরাপদ যানবাহনের যূগে হেটে হজ কতটা ইসলাম সমর্থন করে?
২। ইসলাম কি কঠিন বিষয়ে অনুমোদন দেন নাকি সহজের নির্দেশনা দেন?
৩। রিয়া বা লোক দেখানোর জন্য যেন না হয়।
১। নিরাপদ যানবাহনের যূগে হেটে হজ কি ইসলাম সমর্থন করে:
ইসমাল মানুষকে সহজতার নির্দেশ দেন যখন কঠিন কোনো বিষয় বান্দার সামনে উপস্থিত হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, یُرِیۡدُ اللّٰهُ بِکُمُ الۡیُسۡرَ وَ لَا یُرِیۡدُ بِکُمُ الۡعُسۡرَ আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান কঠিন করতে চান না। অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, لَا یُکَلِّفُ اللّٰهُ نَفۡسًا اِلَّا وُسۡعَهَا ؕ لَهَا আল্লাহ তায়ালা কোন ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাহিরে কিছু চাপিয়ে দেন না। অন্য আআতে আল্লাহ বলেন, یُرِیۡدُ اللّٰهُ اَنۡ یُّخَفِّفَ عَنۡکُمۡ ۚ وَ خُلِقَ الۡاِنۡسَانُ ضَعِیۡفًا আল্লাহ তোমাদের ভার লঘু করতে চান। আর মানুষ সৃষ্টিগতভাবেই দুর্বল।إن الدين يسرولن يشاد الدين إلا غلبه فسددوا وقاربوا وأبشروا واستعينوا بالغدوة والروحة وشيء من الدلجة নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় দীন সহজ-সরল। দীন নিয়ে যে বাড়াবাড়ি করে দীন তার ওপর বিজয়ী হবে (সে পরাজিত হবে)। কাজেই তোমরা সঠিক পন্থা অবলম্বন কর এবং এর নিকটবর্তী থাক, আশান্বিত থাক এবং সকাল-সন্ধ্যায় ও রাতের কিছু অংশে (ইবাদতের মাধ্যমে) সাহায্য চাও ।
ইসলাম কঠিন বিষয়ে সহজতর পথ অবলম্ভনের নির্দেশ করেছেন। কিন্তু আমরা নিজের উপর কঠিন বিষয়কে লাজেম করে নিয়েছি। পৃথিবীর এই বিজ্ঞানময় যূগে যেখানে হজে যেতে সর্ব পূর্বের বসবাসরত একজন মুসলিমের সময় লাগে সর্বোচ্চ ১৮ ঘন্টা সেখানে ৩৬৫ দিন হেটে হজে যাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা ইসলামে নেই। হরেক রকমের ঝামেলা পেরিয়ে অনেকগুলো রাষ্ট্রের বর্ডার ক্রস করে তাকে আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হতে হবে। এতে তার দীর্ঘ সময়ের ক্লান্তি, জলবায়ূ পরিবর্তনে বিভিন্ন রোগ-বালাই কিংবা অনিরাপদ রাস্তার মুখোমুখি হতে হবে। দীর্ঘ সময়ের পথযাত্রা তার শারীরিক ক্ষতিরও কারণ হতে পারে। বিশেষ করে মাত্র ৬ ঘন্টার ট্রানজিটের রাস্তা একবছর পায়ে হেটে সময় ও শরীরের ক্ষতি করার কোনো বিধান ইসলামে নেই যেখানে বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে। ইসলাম কখনো বৈরাগ্যবাদী জীবনে সমর্থন করেনা। আল্লাহ তায়ালা নির্দিষ্ট সময় ইবাদত আদায় করার সাথে সাথে মানুষকে জমিয়ে কাজ করে রিজিক অন্বেশনের নির্দেশ করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, فَاِذَا قُضِيَتِ الصَّلٰوةُ فَانْتَشِرُوْا فِى الْاَرْضِ وَابْتَغُوْا مِنْ فَضْلِ اللّٰهِ وَاذْكُرُوا اللّٰهَ كَثِيْرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ অতঃপর যখন নামায সমাপ্ত হয়, তখন যমীনে ছড়িয়ে পড়, আর আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করতে থাক যাতে তোমরা সাফল্য লাভ করতে পার।
অধুনিক যাতায়াত ব্যবস্থার ফলে আমাদের জীবন মান উন্নত হয়েছে। মূহুর্তের মধ্যে সারা পৃথিবীতে যোগাযোগ করা যাচ্ছে। এমন সময় পায়ে হেটে শারীরিক ক্ষতি সাধন করে হজে গমন ইসলামে সমর্থনযোগ্য নয়। কাওায়েদুল ফিকহে রাসূল সঃ এর হাদিসকে মূলনীতি ধরে এমন মাসয়ালা দিয়েছেন ফকীহগণ, যে নিজের ক্ষতি সাধন হবে এমন কাজ ইসলামে জায়েজ নেই। لاَ ضَرَرَ وَلاَ ضِرَارَ ক্ষতি করাও যাবে না, ক্ষতি সহাও যাবে না (মুসনাদে আহমাদ:২৮৬২)।
ইসলামের অন্যতম একটি মূলনীতি হলো, কারো ক্ষতি করা যাবে না, নিজেও ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া যাবে না। কাউকে কষ্ট দেয়া যেমন অপরাধ তেমনি নিজকে নিজে কষ্ট দেয়াও অপরাধ। আমরা মানুষের ক্ষতি করবো না, নিজেদের ক্ষতি হয় এমন কাজও করবো না। দীর্ঘ ১ বছর হেটে যাওয়ার পথ কি তার জন্য নিরাপদ? হজের অন্যতম শর্ত হলো যিনি হজ করবেন তার যাত্রাপথ নিরাপদ হতে হবে। যেখানে উড়োজাহাজের পথ নিরাপদ সেখানে কণ্ঠকাকীর্ণ দূর্গম ও অচীন পথে যাত্রা করা কখনো ইসলাম সমর্থন করেনা। কাওাইদুল ফিকহের পরিভাষায় ইসলামী শরীয়ত কঠিন বিষয়ে সহজ পথ বাচাই করার নির্দেশ করেছে। তেমন’ই একটি কাওাইয়েদ হলো المشقة تجلب التيسير অর্থাৎ, কষ্ট সহজতাকে টেনে আনে। ড. আল্লামা ইবনূ বুরনূ বলেন, কষ্ট ও জটিলতা ফহজ সাধ্যতার কারণ হয়ে দাড়ায়। এই কায়েদা দ্বারা উদ্দ্যেশ্য হলো উম্মতের কষ্ট লঘব করা এবং ইবাদতে খুশু তৈরি করা। যদি পথ নিরাপদ না হয় তাহলে সেই পথে হজের জন্য যাত্রা কখনো ইসলাম সমর্থন করেনা।

২। ইসলাম কি কঠিন বিষয়ে অনুমোদন দেন নাকি সহজের নির্দেশনা দেন?
ইসলাম সরলতা ও মধ্যম পন্থা দীনের নির্দেশ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বান্দার জন্য দীনকে সহজ ও আরামদায়ক করে পাঠিয়েছেন। এতে কোনো বাড়াবাড়ি নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেন, لَاۤ اِکۡرَاهَ فِی الدِّیۡنِ قَدۡ تَّبَیَّنَ الرُّشۡدُ مِنَ الۡغَیِّ দ্বীন গ্রহণের ব্যাপারে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই, সত্য পথ সুস্পষ্ট হয়েছে ভ্রান্ত পথ থেকে। আল্লাহ তায়ালা অন্য আআতে বলেন, مَا یُرِیۡدُ اللّٰهُ لِیَجۡعَلَ عَلَیۡکُمۡ مِّنۡ حَرَجٍ وَّ لٰکِنۡ یُّرِیۡدُ لِیُطَهِّرَکُمۡ وَ لِیُتِمَّ نِعۡمَتَهٗ عَلَیۡکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ আল্লাহ তোমাদেরকে কোন প্রকার কষ্ট দিতে চান না বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান ও তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। অন্য আআতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, مَا جَعَلَ عَلَیۡکُمۡ فِی الدِّیۡنِ مِنۡ حَرَجٍ مِلَّۃَ اَبِیۡکُمۡ اِبۡرٰهِیۡمَ هُوَ سَمّٰىکُمُ الۡمُسۡلِمِیۡنَ۬ مِنۡ قَبۡلُ তিনি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কঠিনতা আরোপ করেননি; তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের মিল্লাত (ধর্মাদর্শ মেনে চল); তিনি পূর্বে তোমাদের নামকরণ করেছেন ‘মুসলিম’। ইসলাম বান্দাকে সহজতার নির্দেশ করেন এবং নিজের উপর কষ্টকর বিষয়কে লাজেম করতে নিষেধ করেন। কারণ ইসলাম একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ দীন ব্যবস্থা। যেখানে কোনো কিছুর কমতি নেই যে সে বিষয়ে উম্মতকে নতুন করে ভাবতে হবে। আল্লাহ তায়ালা হযরত মুহাম্মদ সঃ পাঠানোর মাধ্যমেই দীনের পরিপূর্তা দিয়েছেন। তাই ইসলামে কঠিন বিষয়কে নিজের উপর প্রতিষ্ঠিত করে নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা বা অতিরিক্ত সাওয়াবের কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং সাধ্যের বাহিরের বিষয়ের উপর আমল না করাই ইবাদত।
৪। রিয়া বা লোক দেখানোর জন্য যেন না হয়?
ইবাদতে রিয়ার মিশ্রণ শয়তানের এক ভয়ঙ্কর ফাঁদ। শয়তান চায় যেন বান্দার আমল যে কোনোভাবে বিফলে নেয়া যায়। আমরা সাধারণত দান,সদাকা, যাকাত কিংবা কুরবানি এর আমল গুলো করেছি লোকে কি বলবে এমন চিন্তা থেকে। খুব কম সংখ্যাক আছেন যিনারা ইখলাসের সহিত এমন আমল করেন। অধিকাংশ হাজী হজ করেন নামের পাশে হাজী লাগানোর জন্য। আল্লাহ সর্বপ্রথম যাদেরকে জাহান্নামে ফেলবেন তারা হলেন শহীদ, দানবীর ও একজন আলেম। তাদের রিয়া ও অহংকারের জন্য আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন। রাসূল সঃ বলেন, আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, কিয়ামতের সবার আগে যাদের বিচারের জন্য আনা হবে- তাদের মধ্যে অন্যতম দানবীর, আলেম ও আল্লাহর পথে জিহাদকারী শহীদ। আল্লাহ তাআলা প্রথমে শহীদকে নেয়ামতগুলো দেখিয়ে প্রশ্ন করবেন, ‘এসব নেয়ামতের পরিপ্রেক্ষিতে তুমি কী করেছো?’ সে উত্তর দেবে, ‘আমি আপনার পথে লড়াই করে শহীদ হয়েছি।’ তখন আল্লাহ বলবেন : ‘তুমি মিথ্যা বলেছো। তুমি শহীদ হয়েছো- লোকে যাতে তোমাকে বীর-বাহাদুর বলে। তুমি সেটি দুনিয়ায় পেয়ে গেছো। সে কারণে এখানে তোমার কোনো প্রাপ্য নেই।’ তখন তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
এরপর একজন দানবীরকে উপস্থিত করে করা হবে। তাকে দেওয়া সম্পদ দেখিয়ে আল্লাহ বলবেন, ‘এসব নেয়ামতের পরিপ্রেক্ষিতে তুমি কী করেছো?’ সে উত্তর দেবে, ‘আমি আপনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এ সম্পদগুলো আপনার পথে ব্যয় করেছি।’ তখন আল্লাহ বলবেন, ‘তুমি মিথ্যা বলেছো। তুমি দান করেছো যাতে লোকে তোমাকে দানবীর বলে। তুমি সেটি দুনিয়ায় পেয়ে গেছো। সে কারণে এখানে তোমার কোনো প্রাপ্য নেই।’ তাকেও জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
এবার একজন আলেমকে নিয়ে আসা হবে। আল্লাহ তাআলা আলেমকে জিজ্ঞাসা করবেন, ‘তোমাকে আমি যে জ্ঞান দিয়েছিলাম- সেটি তুমি কোন পথে ব্যয় করেছো?’ তখন সে বলবে, ‘আমি আপনাকে খুশি করার জন্য সে জ্ঞান অন্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।’ আল্লাহ বলবেন, ‘তুমি মিথ্যা বলেছো। তুমি এসব জ্ঞান অন্যদের কাছে পৌঁছে দিয়েছো- যাতে লোকেরা তোমার প্রশংসা করে এবং তোমাকে প্রাধান্য দেয়। সেটি তুমি দুনিয়ায় পেয়ে গেছো। তাই এখানে তোমার কোনো প্রাপ্য নেই।’ এরপর তাকেও জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৩৮২)
আমাদের পায়ে হেটে হজের মধ্যে যদি বিন্দু পরিমাণ এমন উদ্দেশ্য থাকে যে আমি মানুষের আলোচনার পাত্র হবো কিংবা মানুষ আমাকে দেখবে বাহ বাহ দিবে তাহলে আমাদের সব আ্মল পাপে পরিণত হওয়ার জন্য এই একটা মনের ভাসনাই যথেষ্ট । মানুষের মনের ভাসনা আল্লাহ ভালো জানেন।
হজ শারীরিক এবং অর্থিক সচ্ছলতার সমন্বয়ে ফরজ হয়। যদি কারো অর্থিক সামর্থ্য না থাকে তাহলে তার উপর ফরজ নয় এবং তিনি যদি পায়ে হেটেও যান। যদি আল্লাহর কোনো বান্দার কাবার সান্যিধ্য পাওয়ার রাসূল সঃ এর রওযায় সালাম দেওয়ার ব্যাকুলতা থেকে হেটে গমন করে সেটা ভিন্ন বিষয়। তবে যদি হজের জন্য তিনি হেটে রওনা হোন তাহলে তার এই হজ গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ তার উপর হজ ফরয’ই হয়নি তাহলে গ্রহণযোগ্য হবে কিভাবে? হজ নামায রোজার ন্যায় ইবাদত নয় যে ১০ বছর বয়সে নামায আর রোজার ন্যায় হজ ফরজ হয়ে যাবে। হজের জন্য সাবালক হওয়ার পাশাপাশি আর্থিক সামর্থ্য থাকাও শর্ত। আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য দীনকে সহজ করে দিয়েছেন এবং বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ আমাদেরকে বাড়াবাড়ি থেকে বেঁচে থেকে ইসলামের সঠিক দীক্ষা নেওয়ার জন্য মানসিক শক্তি দিন। আল্লাহু আ’লাম।

এ বিভাগের আরও পোস্ট