“নজরুলের শ্রেণি-সংগ্রাম: একটি পর্যালোচনা”
প্রেম,বিদ্রোহ আর সাম্যের প্রতিভূ জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম(১১জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬-১২ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ)।
প্রেম ও বিদ্রোহ বৈপরিত্যপূর্ণ অথচ সমান্তরাল পথই নজরুলকে দিয়েছে শ্রেষ্ঠত্ব। আর সাম্য দিয়েছে অমরত্ব।
নজরুলের কবি মানস মূলত রোমান্টিক চেতনার মধ্য দিয়ে বিকশিত হয়েছে। রোমান্টিসিজমে যে স্বপ্ন ভাবালোক এবং মানুষের প্রতি যে প্রেম তা কবিকে তাঁর কাব্যিক ভাষাকে বিশিষ্টতা দিয়েছে। পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যে আর্থ-সামাজিকতার যে বৈষম্য সেখানে মানবতার পরাজয় ঘটেছে। যে কারণে নজরুল মানব মুক্তির কথা তাঁর অনেক কবিতায় উল্লেখ করেছেন। “সাম্যবাদী(১৯২৫)” কাব্যের “কুলি-মজুর” কবিতাটি কবির সে জীবন দর্শনের প্রতিফল।
নজরুল মার্ক্সীয় কমিউনিজম দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। যার প্রতিফলন “কুলি-মজুর” শিরোনামের মধ্যে পাওয়া যায়। মার্ক্সীয় দর্শন হচ্ছে শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্টা। “কুলি-মজুর” কবিতায় সরাসরি মার্ক্সবাদ বিষয়টি খুঁজে না পাওয়া গেলেও কবির সাম্য তথা শ্রেণি চেতনা ঠিকই উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
নজরুলের প্রকাশিত পত্রিকা ‘লাঙল’ ছিল মার্কসীয় ভাবধারায় গঠিত ‘বঙ্গীয় কৃষক শ্রমিক দল’র(১৯২৫) মুখপত্র । সর্বোপরি ‘লাঙল’ ছিল অগ্নিযুগের তৎকালীন সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের বিপ্লবী নেতা-কর্মীদেরও একমাত্র প্রিয় পত্রিকা।
এই দলের প্রথম ইশতেহার,গঠন প্রণালী নজরুলের দস্তখতে ‘লাঙলে’ প্রকাশিত হয়েছিল। ‘সাম্যবাদী’ ছাড়াও ‘ লাঙলে’ প্রকাশিত কবির ‘শ্রমিকের গান’, ‘ধীবরের গান’, ‘ কৃষানের গান’, ‘ কুলি-মজুর’, ‘ রাজা-প্রজা’, ‘ চোর-ডাকাত’, ‘ ফরিয়াদ’ ইত্যাদি সহ বহু কবিতা, গান, প্রবন্ধ ; যা শ্রেণি-বিবেদপূর্ণ সমাজব্যবস্থার শোষণ-শাসন ও আর্থিক অসাম্যনীতির ওপর ভিত্তি করেই রচিত।
ময়মনসিংহের ‘কৃষক-শ্রমিক সম্মেলনে’ পাঠানো বক্তব্যে তার প্রকাশ,-“এই মাঠকে জিজ্ঞাসা কর,মাঠে ইহার প্রতিধ্বনি শুনিতে পাইবে, এই মাঠ চাষার,এই মাটি চাষার, এর ফুল ফল কৃষক বধুর। আমার শ্রমিক ভাইরা, যাহারা আপনাদের বিন্দু বিন্দু রক্ত দান করিয়া হুজুরদের অট্টালিকা লালে লাল করিয়া তুলিতেছে।… তাহারা আজ অবহেলিত,নিষ্পেষিত বুভুক্ষু। তাহাদের শিক্ষা নাই, দীক্ষা নাই,ক্ষুধায় পেট পুরিয়া আহার পায়না,পরনে বস্ত্র নাই”। মানুষে মানুষে বৈষম্য , কৃষক-শ্রমিক শ্রেণীর উপর ধনিক শ্রেণীর শোষণ,নিপীড়ন,নির্যাতন, লুণ্ঠন, কলকারখানা তৈরির নামে কৃষাণের জমিন দখল ইত্যাদি সামাজিক ও রাষ্ট্রিক অসাম্য কবি নজরুলের কাব্যে বিধৃত হয়েছে। পরাধীন ভারতে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও দেশীয় ধনবাদী-শক্তির শাসন-শোষণ যন্ত্রের কবলে পড়ে তাদের স্বাধিকার,স্বাধীনতা,সচ্ছলতা সব শেষ হয়ে গেছে। “অন্ন-স্বাস্থ্য,প্রাণ,আশা,ভাষা হারায়ে সকল কিছু
দেউলিয়া হয়ে চলেছে মানব ধ্বংসের পিছু পিছু।” (-সাম্যবাদী ঃ চোর ডাকাত) এই সময়েই কবি ‘বঙ্গীয় কৃষক শ্রমিক দল’-এর পক্ষ থেকে ঘোষণা দেন,
‘ লাঙল যার জমি তার’।
‘লাঙল নবযুগের নব দেবতা।
জয় লাঙলের জয়।
জয় লাঙলের দেবতার জয়’।
প্রতারিত,নির্যাতিত,শোষিত শ্রেণির এ’ আত্ম উপলব্ধি, এ’ বিদ্রোহ ঘোষণা,বাংলা সাহিত্যে এ’ এক অনন্য নতুন সুর। এ’ সুর কথা কয়ে উঠেছে মার্কস, গোর্কী,লেলিনের পক্ষে সর্বহারার কবি নজরুলের কণ্ঠে :- (১) “জনগণে যারা জোঁক সম শোষে তারে মহাজন কয়, ‘ সন্তান সম পালে যারা জমি, তারা জমিদার নয়।“
“মাটিতে যাদের ঠেকেনা চরণ/ মাটির মালিক তারাই হন”।
(২) “আজ চার দিক হতে ধনিক বণিক শোষণকারীর জাত,
(ও ভাই) জোঁকের মতন শুষছে রক্ত কাড়ছে থালার ভাত”। (-সর্বহারা ঃ কৃষাণের গান)
(৩) “চোখ ফেটে এলো জল-
এমনি করিয়া জগত জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল?”
সাথে সাথে জমিদার, জোতদার, মহাজনদের বিরুদ্ধে কৃষাণের কণ্ঠে দুর্বার বিদ্রোহের ঘোষণা দিয়েছেন কবি-
“মোদের জমির মাটি, ঘরের বেটি সমান রে ভাই
কে রাবণ করবে হরণ, দেখবো রে তাই”।
শোষিত মানুষের পক্ষের এই ঘোষণা সাহিত্যেও ইতিহাসে ‘মেঘনা কার্টা’। অতঃপর কৃষক,শ্রমিক, ধীবর,মুঠে, মেথর তথা শোষিত শ্রেণির মানুষদের জাগাতে,নিজ নিজ অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে, বাঁচা মরার লড়াইয়ে সামিল হতে আহ্বান জানিয়ে তিনি বিদ্রোহে-উদ্দীপ্ত বীজ-মন্ত্র ছড়িয়েছেন।
“উঠ্রে চাষী জগতবাসী ধর কষে লাঙল
দেখুক এবার সভ্য-জগত চাষার কত বল”।
(২)“যত শ্রমিক শু’ষে নিঙড়ে প্রজা
রাজা উজির মারছে মজা,
এবার জুজুর দল ঐ হুজুর দলে
দলবি রে আয় মজুর দল,
ওরে ধ্বংস-পথের যাত্রীদল
ধর হাতুড়ি তোল কাঁধে শাবল”।
(৩)“শোন অত্যাচারী! শোনরে সঞ্চয়ী,
ছিনু সর্বহারা,হব সর্বজয়ী।
ওরে সর্বশেষের এই সংগ্রাম মাঝ
নিজ নিজ অধিকার জুড়ে
দাঁড়া সবে আজ” ‘ (৪) “ঐ দিকে দিকে বেজেছে ডঙ্কা, শঙ্কা নাহিক আরমরিয়ার মুখে মারণের বাণী উঠিতেছে মার মার”।
উদ্ধৃত কবিতাংশ গুলিতে কবি তীব্র ভাষায় বৃটিশদের পদলেহি ধনিক-বণিকদের শোষণ পদ্ধতির স্বরূপ তুলে ধরেছেন।এতে শ্রেণি সংগ্রামের মূলভাব নজরুল-কাব্যে তীব্রভাবে ব্যক্ত হয়েছে।
কাজী নজরুল ইসলাম শ্রেণি-সংগ্রামের কবি। রুশো,ভলটেয়ার ,গোর্কি .আলবেয়ার কামু, ব্লাদিমির মায়াকভস্কি ও মার্কসের সমগোত্রীয়। সমাজ সচেতন ও দার্শনিক। বৈজ্ঞানিক সাম্যবাদ নজরুল শক্তভাবে আয়ত্ত করতে পেরেছিলেন। তাই ধনবাদী-শোষক-বুর্জোয়ার জুলুম অত্যাচার নিষ্পেষণে যে সমাজের শতকরা নব্বই ভাগ মানুষ ভূমিহীন, গৃহহীন,সম্পদহীন ; তাদের বিরুদ্ধে নিজ নিজ অধিকার আদায়ে একতাবদ্ধ প্রতিরোধ, সংগ্রামের যে বিকল্প নেই তা তীব্রভাবে প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর সাহিত্যে।
মার্কসের সাম্যবাদের আন্তর্জাতিকতা অন্তরে ধারণ করে নজরুল ঘোষণা দেন,“নির্যাতিতের জাতি নাই”। তিনি নিপীড়িত তথা সমগ্র মানবজাতিকে ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণিহীন সমাজ গড়ে তোলার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। নজরুলের পরিকল্পিত সাম্য-রাজ্যে সবমানুষ সমান।তাদের মধ্যে আর্থিক বৈষম্য নেই, ধর্মীয় ব্যবধান নেই, বর্ণেও বিভেদ নেই। ‘সাম্যবাদী’তে তার তীব্র প্রকাশ-
“গাহি সাম্যের গান-
বুকে বুকে হেথা তাজা সুখ ফুটে, মুখে মুখে তাজা প্রাণ।
বন্ধু, এখানে রাজা-প্রজা নাই, নাই দরিদ্র-ধনী
হেথা পায় নাক কেহ ক্ষুদ ঘাঁটা,কেহ দুধ-সর-ননী।.. ..
নাইকো এখানে ধর্মের ভেদ,শাস্ত্রের কোলাহল,
পাদরী-পুরুত-মোল্লা-ভিক্ষু এক গ্লাসে খায় জল।”
কবি নজরুলের এই পৃথিবী মার্কসীয় সাম্যবাদেরই পৃথিবী।
সঠিক শিল্পসত্তার আলোচনা করতে গিয়ে ‘রোমারোলা’র সুরে বলা যায়,“নজরুল ছিলেন সর্বহারা শ্রেণির মধ্যমণি”।
“তিরিশের পর থেকে বাংলা সাহিত্যে জনজীবনকে অবলম্বন করার যে স্পৃহা লক্ষ্য করা যায়,নজরুল তার উদ্গাতা।সর্বহারা মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা, প্রীতি এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তাঁর অধিনায়কত্ব বহুদূর পর্যন্ত প্রসারিত। পরবর্তীকালে কৃষক-শ্রমিক আন্দোলন স্পষ্ট হয়েছে, বুদ্ধিজীবীরা তাতে হয়েছেন অংশীদার।.. ..নজরুলের অবদানের প্রধান দিক সাহিত্য সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সর্বহারা মানুষের পক্ষে শিল্পীসাহিত্যিকের অংশ গ্রহণ। বাংলায় তিনিই এই কাজটি প্রথম শুরু করেছিলেন। বাংলা কবিতায় তখনই বিদ্রোহী সুরের জোয়ার এসেছিল। এ যেন কৃষাণ বিদ্রোহ।.. ..নজরুলের ‘কৃষাণের গান’, ‘শ্রমিকের গান’,‘ ছাদ পেটার গান’,‘কুলি-মজুর‘ কবিতার পরই সম্ভব হয়েছিল বিমল চন্দ্র ঘোষ, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, গোলাম কুদ্দুস,দীনেশ দাস,সুকান্ত ভট্টাচার্যের আবির্ভাব।” (নজরুল কাব্য সমীক্ষা-আতাউর রহমান)
নজরুল যেমন বাঙালিদের মধ্যে সর্বপ্রথম ‘ভারতের পূর্ণ স্বাথীনতা’র ঘোষক তেমনি নজরুলই বাংলা-সাহিত্যের মাধ্যমে ভারতে প্রথম ‘কৃষকরাজ-শ্রমিকরাজ’ তথা ‘সমাজতান্ত্রিক’ আন্দোলন প্রতিষ্ঠারও প্রথম বাঙালী কবি। নজরুল এই কৃতিত্বের একক দাবীদাব।বাংলা সাহিত্যে এই কালজয়ী বিপ্লবী-ধারার তিনিই নির্মাতা। তাঁর ‘লাঙল’, ‘গণবাণী’র যুগের সমস্ত রচনাই শ্রেণিবৈষম্য ও শ্রেণিসংগ্রামকে ভিত্তি করেই লেখা। ‘কৃষকের গান’, ‘শ্রমিকের গান’, ‘কুলি-মজুর’, ‘নারী’, ‘রাজা-প্রজা’, ‘ছাদ পেটার গান’ এবং ‘ফরিয়াদ’সহ আরো অনেক কবিতায় যে শ্রেণিচেতনা, সাম্যবাণী ফুটে উঠেছে-তাতে মার্কসীয় তত্ত্ব বা‘মার্কসবাদ’পরিপূর্ণভাবে বলবৎ হয়েছে। সুতরাং বলাবাহুল্য যে সুকান্ত,সুভাষদের মত প্রেমেন্দ্র মিত্র, সমর সেন, বিষ্ণুদে, বুদ্ধদেব বসুরাও নজরুল ইসলামের নির্মিত শ্রেণিসংগ্রামের এই পথ ধরেই সমাজতান্ত্রিক ধারার কাব্য রচনায় ব্রতি হয়েছেন।
নজরুল এক সময় সরাসরি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু, কমিউনিস্টরা যে শ্রেণি চেতনা বা সাম্যের কথা বলে নজরুলের শ্রেণি চেতনা বা সাম্য তা থেকে অনেক আধুনিক এবং মানব কেন্দ্রিক।
ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মুজফ্ফর আহ্মেদ ছিলেন নজরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একক ব্যক্তি হিসেবে কবির মানস গঠনে তিনি যতটা প্রভাব বিস্তার করেছিলেন, সম্ভবত অন্য কেউ তা করেননি। তাঁর কাছ থেকে তিনি কেবল অসাম্প্রদায়িকতার শিক্ষা লাভ করেননি, ধনী-দরিদ্রভেদে মানুষ যে সমান, এই ধারণাও অর্জন করেছিলেন। মুজফ্ফর আহ্মেদের এই প্রভাব এতটাই গভীর ছিল যে, কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেওয়ার কথাও কবি একসময়ে ভেবেছিলেন, যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি পার্টিতে যোগ দেননি। কারণ তিনি পার্টির নিয়মকানুন মেনে চলার মতো মানুষ ছিলেন না, তিনি চলতেন আপন খেয়ালে। তিনি যে লিখেছিলেন, ‘আমি দলে যাই যত নিয়ম কানুনশৃঙ্খল।’ সেটা স্রেফ কবিত্বের কথা ছিল না। এ বৈশিষ্ট্য তাঁর নিজের স্বভাবের মধ্যেই প্রোথিত ছিল। তা ছাড়া, প্রথম দিকে তাঁর হৃদয়ে যে অফুরন্ত মানবপ্রেম ছিল, তা দিয়ে তিনি মানুষে-মানুষে ভেদাভেদ থাকবে না, দরিদ্ররা দুবেলা দুমুঠো খেতে পাবে—এই সরল সত্যটা যতটা বুঝতেন, মার্ক্সবাদী শ্রেণি-সংগ্রামভিত্তিক সাম্যবাদ সম্পর্কে তাঁর ধারণা ততটা সম্যক ছিল না।
নজরুল ইসলাম ছিলেন স্বাধিকার স্বাধীনতা আন্দোলন ও লাঞ্ছিত বঞ্চিত শোষিত গণ-মানুষের কবি। তিন চেয়েছিলেন শ্রেণি-বিভক্ত সমাজে শোষিতদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। কুলি-মজুরদের মত দরিদ্র জনগোষ্ঠী যুগে যুগে বিত্তবান দ্বারা নিপীড়িত এবং শোষিত। সমাজ যেন দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত। তার একদল হচ্ছে শোষক আরেক দল হচ্ছে শোষিত। তাই “কুলি-মজুর” কবিতার শুরুতে যেন গল্পের ছলে কবি বলেছেন__
দেখিনু সেদিন রেলে,_
কুলি বলে এক বাবুসা’ব তারে ঠেলে দিল নিচে ফেলে!
চোখ ফেটে এল জল
এমনি ক’রে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল?
কবির জীবন দর্শন যেহেতু মানবতা কেন্দ্রিক তাই মানবতার এ পরাজয়কে কবি মেনে নিতে পারেন নি।
মার্ক্সবাদ যেখানে রাজনৈতিক ভাবে বিপ্লবী নজরুল সেখানে সমাজ সংস্কারে বিপ্লবী। মানুষে মানুষে যে ব্যবধান তা বুঝিয়ে দিয়ে নজরুল একটি আলোকিত মানবিক সভ্যতা সৃষ্টি করতে চেয়েছেন। সমাজে এই অবহেলিত জনগোষ্টীর উদ্দেশ্যে কবি অনেক আশাবাদী__
তারাই মানুষ,তারাই দেবতা,গাহি তাহাদেরি গান,
তাদের ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান!
অর্থাৎ কবি আগামী সম্ভাবনার কথা বলেছেন। সমাজকে নব নব সৃষ্টির পিছনে সেই ছোটদের ভূমিকাও রয়েছে। এই সত্ত্বটি যেমন উচ্চারিত হয়েছে তেমনি বৈষম্যকে নির্মূল করে মানব অধিকার কে নজরুল প্রতিষ্টা দিতে চেয়েছেন।
নজরুলের এক একটি কবিতা ছিল সর্বহারার পক্ষে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের এক একটি ফরমান। শত্রু-বিনাশী হাতিয়ার। ফলে সর্বহারা মানূষ শ্রেণি -সচেতন হয়ে শ্রেণি -সংগ্রামে উদ্দীপ্ত হয়েছিল। এইখানেই নজরুলের সার্থকতা। এইখানেই নজরুল অনন্য। কথিত শ্রেণি -সংগ্রামের কবিরা তাঁর প্রদর্শিত পথে চলেও তাঁর মত সফল হতে পারেনি।তাই বলা যায় ত্রিশের আগে পরের কোন কবির পক্ষেই তাঁকে অতিক্রম করা সম্ভব হয়নি। আর শ্রেণি সংগ্রামমূলক কাব্য রচনায় তিনি শুধু অনতিক্রম্য নন-পিতৃস্থানীয়।
উৎস:
১.লেকচার, আহমদ আতিকুল মাওলা, সিদ্ধেশ্বরী কলেজ।
২.বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা।