মীনাঙ ও রীতার পড়ালেখা

সন্ধ্যাবেলা। রাতুল তার ছোট বোনকে পড়াচ্ছে। ওর বোনের নাম রীতা। রীতা এবারই স্কুলে ভর্তি হয়েছে৷ গ্রামের একটি প্রাইমারি স্কুলে। প্রথম শ্রেণিতে। ও খুব বুদ্ধিমান। মেধাবীও। স্বরবর্ণ আর ব্যঞ্জনবর্ণ সবগুলো বর্ণই মুখস্থ। ঠোঁঠস্থ। লিখতেও পারে। চক দিয়ে স্লেটেই লিখে। হাতের লেখাও খুব সুন্দর। প্রথম শ্রেণির তুলনায়।

তো রাতুল রীতাকে পড়াচ্ছে। সন্ধ্যাবেলা। কবি জসীমউদ্দীনের ‘মামার বাড়ি’ ছড়াটি। এভাবে পড়াচ্ছে—

“আয় ছেলেরা, আয় মেয়েরা
ফুল তুলিতে যাই
ফুলের মালা গলায় দিয়ে
মামার বাড়ি যাই।”

স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগ থেকেই ছড়াটি রীতার মুখস্থ। কিন্তু ও ‘আয় ছেলেরা, আয় মেয়েরা’ এ লাইনেই গণ্ডগোল পাকিয়ে ফেলে। ও বলে ‘আয় ছেরেলা, আয় মেরেলা’। যতবারই ভুল পড়ছে ততবারই রাতুল শুদ্ধ করে দিচ্ছে। বুঝিয়ে দিচ্ছে ছোট বোনকে। এভাবে নয়, ওভাবে— ‘আয় ছে লে রা, আয় মে য়ে রা’। রীতাও এভাবে বলছে। পড়ছে।

কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই আবার ভুলে যায়। আবার বলে ‘আয় ছেরেলা, আয় মেরেলা’। রাতুল মৃদু রেগে যায়। মিষ্টি স্বরে ধমক দেয় রীতাকে। ও ধমক খেয়ে শুদ্ধ করে পড়ে। ‘আয় ছেলেরা, আয় মেয়েরা’।

সাবাশ, সাবাশ! রাতুল রীতাকে আদর করে। কপালে আর গালে চুমো দেয়। এই তো হলে আমার বোন৷ এবার পেরেছ। এভাবেই পড়তে হবে। পড়ালেখা করে তুমি অনেক বড় হবে। অনেক অনেক বড়।

ওদিকে ঘরের কোণে ছিল দুটো কুনোব্যাঙ। একেবারেই চুপচাপ। তারা রাতুল আর রীতার পড়ালেখার সব কাণ্ড দেখেছে। শুনেছে। ওরাও ভাইবোন। টিটুঙ আর মীনাঙ। তাদের বাবা-মা নেই। বাবা-মা একদিন খাবার খোঁজতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। এ থেকেই তারা একা একা রীতাদের ঘরে বাস করে। খিদে পেলে পোকামাকড় খায়। কোথাও যায় না।

তো রীতার পড়ালেখা দেখে মীনাঙ তার ভাইকে বলল; ভাইয়া, তুমি কি আমাকে এভাবে পড়াবে? টিটুঙ হাসল। আর বলল; আমাদের পড়ালেখা শিখতে হয় না৷ আমরা ব্যাঙজাতি। আমাদের পড়ালেখার প্রয়োজন নেই। ওসব পড়ালেখা মানুষ জাতির জন্য।

কিন্তু মীনাঙ নাছোড়বান্দা! ও পড়ালেখা শিখবেই। বলল, তুমি আমাকে পড়াতেই হবে ভাইয়া। আমি অনেক অনেক বড় হব। তা না হলে আমি তোমার সাথে আর কথা বলব না৷ আমি অন্য কোথাও হারিয়ে যাব। মা-বাবার মতোই। আমাকে কোথাও আর খোঁজে পাবে না।

কী আর করবে টিটুঙ! ছোট্টবোনের আবদার বলে কথা। টিটুঙ বলল; ঠিক আছে। আমি কাল থেকে তোমাকে পড়াব৷ যখন রাতুল তার বোন রীতাকে পড়াবে। মীনাঙ ভীষণ খুশি৷ খুশিতে লাফিয়ে উঠল। নেচে উঠল। গেয়ে উঠল। গাল ফুলিয়ে গান ধরল। ‘কটর, কটর, কটর কট! কটর, কটর, কটর কট…

এ বিভাগের আরও পোস্ট

তাহেরার বিজয়

তায়্যেবা রুবায়েত