
সম্পাদকীয়
স্রষ্টা শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, সায়্যিদুস-সাক্বালাইন, রাহমাতুল্লিল আ’লামীন হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (সা.)। কুরআন শরীফে তাঁর স্তুতি- বন্দনা খোদ আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জাত করেছেন, মর্যাদায় করে রেখেছেন সমোন্নত। চরিত্রে যিনি সর্বকালের সর্বোৎকৃষ্ট ও মানবতা ঘনিষ্ট মহাদর্শ। যার তুলনা শুধুই তাঁর “উসওয়াতুন হাসানাহ” তথা সর্বোৎকৃষ্ট আদর্শ।
পৃথিবীর দিকে দিকে দেশ কিংবা প্রদেশে মু’মিন-মুসলমানের পাশাপাশি অনেক অমুসলিম নবী মুহাম্মদ (সা.) এর স্তুতি-গান গেয়েছেন এবং শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি দিয়েছেন। এ সবের পরও নবীযুগ থেকে এখন পর্যন্ত কিছু কাফির-মুনাফিক পাপিষ্ঠ আছে যারা গতানুগতিক ভাবে তাঁর প্রতি কুৎসা রটায় ও কুরুচিপূর্ণ কটূক্তিমূলক মন্তব্য করে বেড়ায়। কাব বিন আশরাফ নামের এক ইহুদি রাসূল (সা.)’কে কষ্ট দিত এবং তাঁর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যভাবে যুদ্ধের হুমকি দিত। এমনকি মদিনায় সাহাবায় কেরাম (রা.)-এর সম্মানিতা স্ত্রীদের নিয়ে বাজে কবিতা বলতে শুরু করে এবং কটূক্তির মাধ্যমে ভীষণ কষ্ট দিতে থাকে। তার এ দুর্ব্যবহারে অতিষ্ট হয়ে রাসূল (সা.) কাব বিন আশরাফকে হত্যার নিদের্শ দেন। মুহাম্মদ ইবনে মাসলামাহ (রা.)’র নেতৃত্বে কয়েক জন সাহাবি তাকে হত্যা করেন। (আর-রাহিকুল মাখতুম-২৮৫)
এমনি ভাবে আবু রাফে নামের আরেক ইহুদিকে রাসূল (সা.) হত্যার নিদের্শ দিয়েছিলেন। সে (রাফে) রাসূল (সা.)-এর বিরুদ্ধে সব সময় কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করত। আল্লামা ইবনে কাসির “আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া” গ্রন্থে ইমাম বুখারী (রাহ.)’র সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) আবু রাফেকে হত্যা করার জন্য বেশ ক’জন আনসারী সাহাবিকে নির্বাচিত করলেন এবং আব্দুল্লাহ ইবনে আতিক (রা.)’কে দলপতি নিয়োগ করলেন। আবু রাফে রাসূল (সা.)’কে কষ্ট দিত এবং এ কাজে অন্যদের সাহায্য করত। (বুখারী, হাদিস-৪০৩৯, ৪০৪০)
মাস-দুয়েক আগে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি’র মুখপাত্র নুপুর শর্মা ও নভিন জিন্দাল হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতি টকশোতে বসে অবমাননাকর অশালীন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে। এই ক্রোড়পত্রের মাধ্যমে আমরা এর তীব্র নিন্দাজ্ঞাপন করছি এবং তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
উল্লেখ্য, হিন্দুত্ববাদী বিজেপি ও উগ্রপন্থী অঙ্গসংগঠনগুলো সময়ে সময়ে ভারতের মুসলমাদের প্রতি বিদ্বেষী আস্ফালন ও বিদ্বেষী কর্মকান্ডসহ হত্যাযজ্ঞতা হরদম চালিয়ে যাচ্ছে। বিজেপি দিল্লীর ক্ষমতায় বসার পর থেকেই ইসলাম-মুসলিম বিদ্বেষী কর্তৃত্ববাদী রাজনৈতিক এজেন্ডায় রূপ নিয়েছে। তারা কু-পরিকল্পিত দীর্ঘমেয়াদি প্রচেষ্টায় মুসলমানদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় অধিকার ও আত্মপরিচয় মুছে দিয়ে একচ্ছত্র হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্টা করতে চায়।
বিজেপির মুসলমান হত্যাসহ বিদ্বেষী কর্মকান্ডে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তরফ থেকে কদাচিৎ নিন্দা-প্রতিবাদ জানানো হলেও মধ্যপাচ্যের আমাদের মুসলিম দেশগুলোর পক্ষ থেকে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায় নি। তবে এবার ব্যতিক্রমী আবহ চোখে পড়ার মতো। বিজেপির মুখপাত্র নুপুর শর্মা ও নভিন জিন্দাল কর্তৃক হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়শা (রা.)’কে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যে মধ্যপাচ্যের আমাদের মুসলিম দেশগুলোর পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। এমনকি ভারতের মিত্র, গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার আরব আমিরাত ও কাতার তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এতে করে মোদী সরকার নতজানু হয়েছে, পাশাপাশি ভারতের সুশীল সমাজের একটি অংশসহ মিডিয়া কিছুটা নড়েচড়ে বসছে। এছাড়া পাকিস্থান, আফগানিস্থানসহ পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ও ইসলামী সংগঠনের তীব্র রোষের মুখে মোদী সরকার। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সরকার বাহাদুর সংসার ঠিকিয়ে রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, তাই এখন পর্যন্ত কোন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেন নি। আমাদের মনে রাখা উচিত; নবীর প্রতি মহব্বত মু’মীনের ঈমান। স্ত্রী-সন্তান, সংসার এমনকি আপন প্রাণের চেয়েও ঘনিষ্ট হলেন নবী মুহাম্মদ (সা.)। নবীর সন্তুষ্টি ছাড়া জীবনে সুখ-শান্তি আসবে না, বরং ধ্বংস আর লাঞ্ছনা অবধারিত।
সাহিত্য বৈচিত্ত্যের নিন্দাজ্ঞাপক বিশেষ ক্রোড়পত্রে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। বিশেষত; সম্মানিত লেখকদের প্রতি কৃতজ্ঞ, যাদের লেখায় এই ক্রোড়পত্র প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছি। ক্রোড়পত্র প্রকাশের মধ্য দিয়ে “সাহিত্য বৈচিত্ত্য” ওয়েব সাইটে (www.sahittabaicitta.com) রূপান্তরিত হয়েছে। এখন থেকে ওয়েব সাইটের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালিত হবে। আশা রাখি, আগামি দিনেও আপনারা আমাদের সাথে থাকবেন।
ক্রোড়পত্রটি যথাসময়ে প্রকাশ করতে না পারায় আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত!
ক্রোড়পত্রটি নির্ভুল করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ছিল। তদুপরি কোন ধরনের ভুল-ত্রুটি দৃষ্টিগোচর হলে অবগত করবেন এবং ক্ষমা করবেন।
ইয়া আল্লাহ্ আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা তোমার হাবীবের মহব্বতের নযরানা হিসেবে কবুল কর। প্রিয় নবী (সা.), তাঁর পরিবার-পরিজনদের প্রতি অনিঃশেষ সালাম পৌঁছিয়ে দাও। আ’মীন ।।